পাঠঃ ৩ ও ৪ ( ডেটা ট্রান্সমিশন )

 


পাঠঃ ৩ ও ৪ ( ডেটা ট্রান্সমিশন )

ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড (Data Transmission Method)

ডেটাকে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ট্রান্সমিট করার জন্য কমিউনিকেশন পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। কেননা মানুষের ব্যবহার্য ফরমেট ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ফরমেট ভিন্ন। তাই মানুষের প্রেরণকৃত তথ্যকে ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তর করে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের মধ্য দিয়ে পরিবাহিত করে পুনরায় অ্যানালগ সিগনালে পরিণত করে মানুষের বোধগম্য তথ্যে রূপান্তর করতে হয়। অর্থাৎ, তথ্যকে একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল ও অ্যানালগ আকারে স্থানান্তর হওয়াকে ডেটা ট্রান্সমিশন বলা হয়। যে পদ্ধতিতে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডেটা ট্রান্সমিট হয় তাকে ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড বলে। প্রতি বারে একসাথে কত বিট ডেটা পাঠানো যায় তার উপর ভিত্তি করে ডেটা ট্রান্সমিশনের দুটি উপায় আছে। যথা-

১. প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশন (Parallel Data Transmission): 

যে ট্রান্সমিশনে ডেটা সমান্তরালভাবে আদান- প্রদান হয় তাকে প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশন বলে। এই পদ্ধতিতে কাছাকাছি অবস্থিত ডিভাইসগুলোর মধ্যে একটি ক্যারেক্টারের সবগুলো বিট একসাথে একাধিক তারের মধ্য দিয়ে ট্রান্সমিট করা হয়। এ ট্রান্সমিশনে ৮ বিট,১৬ বিট বা ৩২ বিট ইত্যাদি ডেটা চলাচল করতে পারে। সাধারণত কম্পিউটারের অভ্যন্তরে একটি অংশ থেকে অন্য অংশে তথ্য আদান-প্রদানে প্যারালাল ট্রান্সমিশন মেথড ব্যবহার করা হয়। দূরত্ব বেশি হলে এই পদ্ধতিতে অনেক তার লাগে ও ব্যবহার মূল্য ব্যয়বহুল। যেমন- তার বা ক্যাবল, ইউএসবি পোর্ট। প্রিন্টারে ডেটা পাঠানোর জন্য প্যারালাল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশনের সুবিধাসমূহ (Advantages of Parallel Data Transmission)

  • এ পদ্ধতিটি দ্রুতগতি সম্পন্ন।
  • একসাথে অনেক বিট চলাচল করতে পারে।
  • ডেটা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এর দক্ষতা অনেক বেশি।
  • ডেটা এক একটি শব্দ বা ওয়ার্ড অনুসারে স্থানান্তরিত হয়।

প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশনের অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Parallel Data Transmission)

  • দূরত্ব বেশি হলে এটি ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
  • প্রতিটি বিটের জন্য পৃথক পৃথক তার ব্যবহার করায় এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। 
  • দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে এর ক্লক পালসও অনেক বেশি সেনসিটিভ হয়ে ওঠে।

২. সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন (Serial Data Transmission): 

যে ট্রান্সমিশনে ডেটা বা তথ্য পর্যায়ক্রমে ১ বিট করে আদান-প্রদান করে তাকে সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন বলে। দূরবর্তী অবস্থানে থাকা ডিভাইসগুলোর জন্য সিরিয়াল ট্রান্সমিশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে একটি তারের মধ্য দিয়ে এক বাইট বা আট (৮) বিটের ডেটা পর্যায়ক্রমে ১ বিট করে পাঠানো হয়ে থাকে। এখানে প্রতিটি বিট ট্রান্সমিশনের জন্য আলাদা আলাদা ক্লক পালস ব্যবহৃত হয়। উৎস থেকে গন্তব্য পর্যন্ত দূরত্ব বেশি হলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। মডেম, মাউস ইত্যাদি যন্ত্রে সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়।

সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশনের সুবিধাসমূহ (Advantages of Serial Data Transmission)

  • এ পদ্ধতিতে ডেটা স্থানান্তরের জন্য মাত্র ১টি লাইন বা পাথের প্রয়োজন হয়।
  • কম খরচে ট্রান্সমিশন লাইন অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করা যেতে পারে।
  • একটি মাত্র লাইন ব্যবহারের কারণে কোনো সিনক্রোনাইজেশনের প্রয়োজন হয় না।

সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশনের অসুবিধাসমূহ (Disadvantage of Serial Data Transmission)

  • এটি ধীরগতি সম্পন্ন।
  • একই সময়ে একটিমাত্র বিট স্থানান্তরিত হয়।
  • ডেটা রূপান্তরের জন্য বিশেষ কনভার্টার যেমন- UART ব্যবহার করতে হয় যা ব্যয়বহুল।

সিরিয়াল ও প্যারালাল ট্রান্সমিশনের মধ্যে পার্থক্য


এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডেটা ট্রান্সমিশন হওয়ার সময় অবশ্যই দুই কম্পিউটারের মধ্যে এমন একটি সমঝোতা থাকা দরকার যাতে সিগন্যাল বিটের শুরু ও শেষ বুঝতে পারে। 

বিটের শুরু ও শেষ বুঝতে না পারলে গ্রহীতা কম্পিউটার সেই সিগন্যাল থেকে ডেটা পুনরুদ্ধার করতে পারে না। এই সিগন্যাল পাঠানোর সময় বিভিন্ন বিটের সমন্বয়ের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিকে বলা হয় সিনক্রোনাইজেশন

সিনক্রোনাইজেশনের উপর ভিত্তি করে সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশনকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(i) অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Asynchronous Transmission)
(ii) সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Synchronous Transmission)
(iii) আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Isochronous Transmission)

(i) অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (Asynchronous Transmission)

যে ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেমে প্রেরক হতে ডেটা গ্রাহকে ক্যারেক্টার বাই ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট হয় তাকে অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন বলে। Asynchronous শব্দের অর্থ হলো অসমন্বিত। অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনে পর পর দুটি ক্যারেক্টার প্রেরণের মাঝের বিরতির সময় সকল ক্ষেত্রে সমান হয় না। এ কারণে নামকরণ করা হয়েছে অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন মেথড। এই ট্রান্সমিশনে ক্যারেক্টার ডেটা বিটগুলো ধারাবাহিকভাবে স্থানান্তরিত হয়। তাই প্রাপক কম্পিউটারকে বোঝানোর জন্য ক্যারেক্টার ডেটা বিটগুলোর শুরুতে একটি অতিরিক্ত স্টার্ট বিট যুক্ত করে দেয়া হয়। এই স্টার্ট বিট পেলেই প্রাপক কম্পিউটার বুঝতে পারে ক্যারেক্টার ডেটা বিট আসা শুরু হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী তার অভ্যন্তরীণ সিস্টেমের ক্লক পালসকে চালু করে। ক্যারেক্টার ডেটা বিটগুলো পুরোপুরি স্থানান্তরিত হবার পর এর শেষে আবার অতিরিক্ত একটি বা দুটি স্টপ বিট যোগ করা হয়। উক্ত স্টপ বিট পেলে প্রাপক কম্পিউটার বুঝতে পারে ক্যারেক্টার ডেটা বিটগুলো আসা শেষ হয়েছে। ডেটা স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়ায় স্টার্ট বিট ও স্টপ বিট অপরিহার্য হওয়ায় এই ট্রান্সমিশনকে স্টার্ট/ স্টপ ট্রান্সমিশনও বলা হয়। অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনে যেকোনো সময় প্রেরক ডেটা পাঠাতে পারে এবং গ্রাহক-প্রাপক তা গ্রহণ করতে পারে বিধায় প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের (RAM, Cache or CPU Memory) প্রয়োজন হয় না। কীবোর্ড থেকে কম্পিউটারে কিংবা কম্পিউটার থেকে প্রিন্টারে ডেটা পাঠানোর জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। অ্যাসিনক্রোনাস ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেমে কীবোর্ডের প্রতি অক্ষর চাপার সাথে সাথে ৮ বিটের একটি ডেটা উৎপন্ন হয়। এই ৮ বিটের ক্যারেক্টার ডেটাকে ট্রান্সমিশনের পূর্বে তার সম্মুখে একটি স্টার্ট বিট ও শেষে একটি বা দুটি স্টপ বিট সংযুক্ত করা হয়। ফলে প্রতিটি ক্যারেক্টারের ডেটা ১০/১১ বিটের ডেটায় রূপান্তরিত হয়ে ট্রান্সমিট হয়। অন্যদিকে ক্যারেক্টার সমূহের ট্রান্সমিশনের সময় বিরতি সমান না হওয়ায় এর ডেটা স্থানান্তরের গতি ধীর হয় এবং দক্ষতা কমে যায়। 

এই ডেটা ট্রান্সমিশনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো-

• যেকোনো সময় প্রেরক ডেটা পাঠাতে পারে ও গ্রাহক/প্রাপক তা গ্রহণ করতে পারে।
• প্রতিটি ক্যারেক্টার এর সাথে একটি স্টার্ট বিট ও একটি স্টপ বিট পাঠাতে হয়।
• একটি করে ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট করার মাঝখানের বিরতি সবসময় সমান নাও হতে পারে।
• কম ডেটা ট্রান্সমিট এর ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী।
• ডেটা ট্রান্সমিট গতি কম।
• ডেটা ট্রান্সমিট দক্ষতা কম।
• প্রেরক স্টেশনে প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয় না।
• ডেটা চলাচল বন্ধ থাকলে মাধ্যমটি অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে।
• খরচ তুলনামূলকভাবে কম।

অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের সুবিধাসমূহ (Advantages of Asynchronous Transmission)

  • যে কোনো সময় প্রেরক ডেটা স্থানান্তর করতে পারে এবং গ্রাহক তা গ্রহণ করতে পারে।
  • ডেটা ইনপুট করার পর তা সংরক্ষণের জন্য ডেটা বাফার রেজিস্টার প্রয়োজন হয় না।
  • ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য প্রেরকের কোনো প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয় না।
  • এর ইনস্টলেশন ব্যয় অত্যন্ত কম।

অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Asynchronous Transmission)

  • যখন ডেটা স্থানান্তরের কাজ বন্ধ থাকে তখন ট্রান্সমিশন মাধ্যমটি অকারণে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে যা মাইক্রোওয়েভ বা স্যাটেলাইট মাধ্যমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
  • সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের তুলনায় এর দক্ষতা কম।
  • ডেটা ট্রান্সমিশনে গতি কম।
  • ডেটা ট্রান্সমিশনে ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের ব্যবহার (Uses of Asynchronous Transmission)

  • কীবোর্ড হতে কম্পিউটারে
  • পাঞ্চকার্ড রিডার হতে কম্পিউটারে
  • কম্পিউটার হতে কার্ড পাঞ্চারে এবং
  • কম্পিউটার হতে প্রিন্টারে ডেটা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে
  • ভিডিও গেমের জন্য জয়স্টিক থেকে ডেটা পাঠানো।