এইচএসসি আইসিটি ( অধ্যায়ঃ এক) - বিশ্বগ্রামের ধারণা

 


এইচএসসি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি 
অধ্যায়ঃ ১ 

বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ সম্পর্কে জানার পূর্বে বিশ্বগ্রামের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

প্রযুক্তি (Technology)

বর্তমান যুগকে বলা হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এই যুগের পুরোটা বিকাশ জুড়ে আছে প্রযুক্তির অবদান। প্রযুক্তি শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Technology। গ্রিক শব্দ Techne (যার অর্থ হলো আর্ট বা শিল্প, কারু কিংবা হাতের দক্ষতা) এবং Logia (যার অর্থ হলো শব্দ) এই দুইয়ের সমন্বয়ে টেকনোলজি শব্দটি গঠিত। প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের সম্বন্দ্বে অর্জিত একটি ব্যবহারিক জ্ঞান। মানব সমাজের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সংজ্ঞায় বলা যায়, প্রযুক্তি হলো কিছু প্রয়োগযোগ্য কৌশল যা মানুষ তার পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করে। যেকোনো যন্ত্র ও প্রাকৃতিক উপাদানের সম্বন্দ্বে অর্জিত জ্ঞান ও তা দক্ষভাবে ব্যবহারের ক্ষমতাকে প্রযুক্তি বলা হয়।

মনে রাখোঃ 

  • Techne এবং Logia-এর সমন্বয়ে গঠিত শব্দটি হলো- Technology।
  • বিজ্ঞান ও প্রকৌশল সম্বন্দ্বে অর্জিত ব্যবহারিক জ্ঞানই হলো- প্রযুক্তি।

তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology)

'তথ্য' শব্দটির ইংরেজি পরিভাষা হলো 'Information'। ইংরেজি ইনফরমেশন শব্দটি ল্যাটিন শব্দমূল 'Informatio' থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই শব্দটির ক্রিয়ামূল 'Informare', যার অর্থ কাউকে কোনো কিছু অবগত করা, পথ দেখানো, শেখানো, আদান-প্রদান ইত্যাদি।

যে প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, এর সত্যতা ও বৈধতা যাচাই, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, আধুনিকীকরণ ও ব্যবস্থাপনা করা হয় তাকে তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) সংক্ষেপে আইটি (IT) বলা হয়। এক কথায় ইনফরমেশন সিস্টেম বা তথ্য ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে তথ্য প্রযুক্তি বলা হয়। 

কম্পিউটারনির্ভর তথ্য প্রযুক্তির উপাদানগুলো হচ্ছে- 

  1. হার্ডওয়্যার বা কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, 
  2. প্রোগ্রামসমূহ বা সফটওয়্যার, 
  3. হিউম্যানওয়্যার বা কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, 
  4. ডেটা, 
  5. ইনফরমেশন, 
  6. নেটওয়ার্ক মিডিয়া বা যোগাযোগ মাধ্যম, 
  7. প্রসিডিওর বা কার্যপদ্ধতি ইত্যাদি।
মনে রাখোঃ 
  • ল্যাটিন শব্দমূল Informatio থেকে উৎপত্তি হয়েছে- Information।
  • কম্পিউটার নির্ভর তথ্য প্রযুক্তির উপাদানগুলো হলো- হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, হিউম্যানওয়্যার ইত্যাদি।

যোগাযোগ প্রযুক্তি (Communication Technology)

কোনো ডেটাকে এক স্থান হতে অন্য স্থানে কিংবা এক ডিভাইস হতে অন্য ডিভাইসে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া হচ্ছে ডেটা কমিউনিকেশন। অর্থাৎ কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নির্ভরযোগ্যভাবে ডেটা বা উপাত্ত আদান-প্রদান করা সম্ভব। 

ডেটা কমিউনিকেশন ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন টেকনোলজি বলা হয়।

প্রধানত তিনটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ডেটা কমিউনিকেশন সিস্টেমের কার্যকারিতা নির্ভর করে। যথা-
১. ডেলিভারি (Delivery): সিস্টেমকে অবশ্যই ঠিক প্রান্তে ডেটা ডেলিভারি করতে হয়।
২. অ্যাকিউরেসি (Accuracy): সিস্টেমকে অবশ্যই সঠিকভাবে ডেটা ডেলিভারি করতে হয়।
৩. টাইমলিনেস (Timeliness): সিস্টেমকে অবশ্যই নির্ধারিত সময়ে ডেটা ডেলিভারি করতে হয়।

মনে রাখো
  • ডেটা কমিউনিকেশন সিস্টেমের কার্যকারিতা নির্ভর করে- ডেলিভারি, অ্যাকিউরেসি ও টাইমলিনেসের উপরে।
  • ডেটাকে এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া হলো- কমিউনিকেশন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information and Communication Technology-ICT

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এমন এক ধরনের একীভূত যোগাযোগ ব্যবস্থা যা টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও তৎসম্পর্কিত সফটওয়‍্যার, হার্ডওয়্যার, মিডলওয়‍্যার, অডিও-ভিডিও সিস্টেম ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত। এ ধরনের ব্যবস্থার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী খুব সহজে তথ্য গ্রহণ, সংরক্ষণ, সঞ্চালন ও বিশ্লেষণ করতে পারেন।

তথ্য প্রযুক্তি হচ্ছে তথ্য ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি হচ্ছে ডেটা কমিউনিকেশন ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি। অর্থাৎ একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে মানুষ যখন কোনো সঠিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে চায় তখন যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র তথ্য প্রযুক্তি মানুষের এই চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উভয়ের উন্নয়নের ফলে মানুষের এই চাহিদা পূরণ হচ্ছে। সার্বিকভাবে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের ফলে তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ প্রযুক্তির একীভূতকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information and Communication Technology- ICT) বলা হয়। কারণ এই দুই প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। একটি আরেকটির পরিপূরক, তবে প্রতিযোগী নয়। কাজেই তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনেকটা সমার্থক হিসেবে সর্বত্রই ব্যবহৃত হচ্ছে। 

বিশ্বব্যাংক গ্রুপ কর্তৃক প্রকাশিত ICT sector উন্নয়নের কৌশলপত্র অনুসারে-
Information and Communication Technology- ICT consists of hardware, software, networks and media for collection, storage, processing, transmission, and presentation of Information (Voice, data, text, images).

ইউনেস্কো ব্যাংকক থেকে প্রকাশিত ICT In Education Programme শীর্ষক বইয়ে ICT সম্পর্কে বলা হয়েছে-
The term "Information and Communication Technologies" (ICT) refers to forms of technology that are used to transmit, process, store, create, display, share or exchange information by electronics means.

তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির মধ্যে সম্পর্ক কী?
তথ্য প্রযুক্তির কাজ হচ্ছে ডেটাকে সংগ্রহ করে ইনফরমেশন তৈরি করা; আর যোগাযোগ প্রযুক্তির কাজ ইনফরমেশন বা তথ্যকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঠিকভাবে সঠিক সময়ে স্থানান্তর করা।

জেনে রাখো

১৯৮০ সালের দিকে একাডেমিক গবেষকরা প্রযুক্তিতে আইসিটি শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন। কিন্তু শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে ১৯৯৭ সাল থেকে। বৃটিশ ব্যবসায়ী ডেনিশ স্টিভেনসন (Dennis Stevenson) ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই শব্দটি প্রথম উল্লেখ করেন, যা পরবর্তীতে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের নতুন জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করা হয়।

অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে ICT-এর সংজ্ঞা- "The branch of technology concerned with the dissemination, processing and storage of Information, especially by means of computers".

বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নীতিমালা ২০০৯ অনুসারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে, 'যেকোনো প্রকার তথ্যের উৎপত্তি, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চালন এবং বিস্তারণে ব্যবহৃত সকল ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি'-কে বোঝায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. কম্পিউটিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম: কম্পিউটিংসহ সকল ধরনের ইলেকট্রনিক ডেটা প্রসেসিং যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও এক্সপার্ট সিস্টেম ইত্যাদির ব্যবহার করা হয়।

২. ব্রডকাস্টিং: রেডিও এবং টেলিভিশন যা ব্রডকাস্টিং-এর মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে একমুখী তথ্য সম্প্রচার করে।

৩. টেলিকমিউনিকেশন: ফিক্সড টেলিফোন ও মোবাইল বা সেলুলার ফোনসহ সকল ধরনের উভয়মুখী টেলিযোগাযোগ মাধ্যম যা বিশ্বের বিশাল জনগোষ্ঠী ব্যবহার করছে।

৪. ইন্টারনেট: সারাবিশ্বের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো ইন্টারনেট, যাতে সংযুক্ত থাকলে যেকোনো স্থান থেকে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়।

মনে রাখোঃ 
  • আইসিটি শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়- ১৯৮০ সালের দিকে।
  • সারাবিশ্বের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো- ইন্টারনেট।

বিশ্বগ্রাম (Global Village)

গ্রামের সকল মানুষ একে অপরকে চেনে এবং প্রতিটি গ্রামের সংযোগ কাছাকাছি হওয়ায় সেখানকার বসবাসকারী সকল মানুষ খুব সহজে তাদের বিভিন্ন দৈনন্দিন প্রয়োজনে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। গ্রামে কোনো একটি বিষয়ে আলোচনা হলে মুহূর্তের মধ্যে তা একে অপরের মাধ্যমে জানাজানি হয়ে যায়। তেমনি বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই এক দেশের গ্রামের খবর অন্য দেশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই বিশ্বের প্রতিটি গ্রামের বসবাসকারীরা তাদের সুখ-দুঃখ, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয়ের খবরা-খবর একে অপরের সাথে বিনিময় করছে এবং একে অপরের পাশাপাশি থাকছে। আর এভাবেই তারা প্রযুক্তির সাহায্যে বিশ্বগ্রাম তৈরি করেছে।


বিশ্বগ্রামের প্রথম ধারণা দেন কে?


কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিখ্যাত দার্শনিক, যোগাযোগ তত্ত্ববিদ হারবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshall McLuhan) ১৯৬২ সালে The Gutenberg Galaxy ও ১৯৬৪ সালে Understanding Media নামক দুটি বইয়ে সর্বপ্রথম গ্লোবাল ভিলেজ কথাটি ব্যবহার করেন। এজন্য তাকে বিশ্বগ্রামের জনক বলা হয়। বিশ্বগ্রামের মূল কথা হলো- বর্তমান বিশ্বকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে একটি গ্রামে পরিণত করা। ম্যাকলুহান ১৯১১ সালের ২১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ও ১৯৮০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মৃতুবরণ করেন।

বর্তমানে আমরা আমাদের অনুভূতিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে পৌছাতে পারছি। অনুরূপভাবে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষগুলো তাদের অনুভূতি আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে। ফলে উভয়ের মধ্যে একটি কমিউনিটি তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী স্বল্প সময়ে এই যোগাযোগ সুবিধার ফলে বিশ্বকে একটি গ্রাম হিসেবে তুলনা করা হচ্ছে। এজন্য বর্তমান বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম বলা হয়। গ্লোবাল শব্দের অর্থ হলো বিশ্ব। ভিলেজ শব্দের অর্থ গ্রাম। গ্লোবাল ভিলেজ অর্থ বিশ্বগ্রাম। 

হারবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান তার 'The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man' এবং 'Understanding Media' বইতে প্রথম বিশ্ব গ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণা দেন।

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক বিশ্বগ্রাম সম্পর্কে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকজনের সংজ্ঞা দেওয়া হলো- 

রোলান্ড রবার্টসন বলেন, "বিশ্বায়ন বা বিশ্বগ্রাম হচ্ছে বিশ্বের সংকোচন ও পরস্পর নির্ভরশীলতা।"

মার্টিন আলব্রো বলেন, "বিশ্বায়ন বা বিশ্বগ্রাম হচ্ছে সামগ্রিক কমিউনিটির মধ্যে সমস্ত মানুষকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া।"

এন্থনি গিডেন্স বলেন, "বিশ্বায়ন বা বিশ্বগ্রাম হচ্ছে বিশ্বব্যাপী সামাজিক সম্পর্কের প্রগাঢ়করণ।"

অক্সফোর্ড আমেরিকান ডিকশনারি অনুযায়ী গ্লোবাল ভিলেজ হচ্ছে- "The world Considered a single community linked by telecommunications."

সুতরাং আমরা বলতে পারি, বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা, যেখানে পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষই একটি একক সমাজে বসবাস করে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই তাদের চিন্তা- চেতনা, অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি-কৃষ্টি ইত্যাদি বিনিময় করতে পারে এবং একে অপরকে সেবা প্রদান করে থাকে।

WWW (world wide web) আবিষ্কারের অনেক পূর্বেই Global Village শব্দের ধারণা পাওয়া যায়। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে এখন যোগাযোগ হচ্ছে। Facebook, Youtube, WhatsApp, Instagram, Facebook Messenger, Wechat, TikTok, QQ, Telegram, Snapchat, Qzone, Pinterest, Twitter, Reddit, Quora, Skype, Microsoft Teams, LinkedIn, Zoom, Tango, Viber, IMO, Google Duo ও Amazon Alexa এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে মানুষ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। মূলত ইলেকট্রনিক টেকনোলজির মাধ্যমে বিশ্বগ্রাম তৈরিতে ক্রমবর্ধমান উন্নতি সাধন হচ্ছে। এক কথায় বলা যায়- "গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বা কমিউনিটি, যেখানে কমিউনিটির সকল সদস্য ইন্টারনেট তথা যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত"। যেমন- জনাব মাসুদ রানা কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও Zoom Meeting সফটওয়্যার ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত ছেলে আহাদের সাথে এবং নিজ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং মিটিং করেন। এ সকল যোগাযোগের জন্য কম্পিউটার ও ইন্টারনেটসহ কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়া দূরত্বের ব্যবধানকে কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে এক দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অন্যান্য বিষয়ের খবরা-খবর অন্য দেশের মানুষ দ্রুত নিতে পারে- যা একটি গ্রামের মতো পরিবেশ তৈরি করেছে। এভাবেই বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

মনে রাখো
  • বিশ্বগ্রাম ধারণাটির প্রবক্তা হলেন- মার্শাল ম্যাকলুহান। [ঢাকা , কুমিল্লা বোর্ড - ২০১৬] 
  • গ্লোবাল ভিলেজ শব্দের অর্থ হলো- বিশ্বগ্রাম।

বিশ্বগ্রামের সুবিধাসমূহ (Advantages of Global Village)

  1. বিশ্বের যেকোনো স্থানে যেকোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা যায়।
  2. ভিডিও কলের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলা যায়।
  3. অনলাইনে আর্থিক লেন-দেন করা যায়।
  4. বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
  5. যেকোনো দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়।
  6. ভৌগোলিক সীমানা ও অর্থনৈতিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা যায়।
  7. বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির বই অনলাইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়।
  8. ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো যায়।
  9. বিনোদন ও খেলাধুলা সম্পর্কিত তথ্য জানা যায়।
  10. ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের সাথে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বজায় রাখা যায়।
  11. পৃথিবীর নামকরা চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা ঘরে বসেই নেওয়া যায়।
  12. ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই আউটসোর্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।
  13. বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার ফলে এক দেশের খবর অন্য দেশের ঘরে বসেই দেখা যায়।
  14. ব্যবস্থাপনা খরচ অনেক কম।
মনে রাখো
  • ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে- বিশ্বগ্রামের কারণে।
  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাকে বলে- আউটসোর্সিং।

 বিশ্বগ্রামের অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Global Village)

  1. বেশি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষ যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ে ও শারীরিক সমস্যায় ভোগে।
  2. ইন্টারনেট হ্যাকিং তথা সাইবার ক্রাইমের কারণে তথ্যের গোপনীয়তা নষ্ট হয়।
  3. মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে রাষ্ট্রের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।
  4. বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন ইন্টারনেট ব্যবহার করে গোপন যোগাযোগ করে রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন করে।
  5. এক দেশের সংস্কৃতি অন্য দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  6. ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের ফলে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে।
  7. বিশ্বগ্রামের ফলে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোপন তথ্য বা নথি প্রকাশের ফলে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা নষ্ট হয়।
  8. ইন্টারনেট ব্যবহার করে কাউকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা।
  9. ব্যাংকিং বা আর্থিক লেনদেনের তথ্য চুরি করে গ্রাহকগণের ক্ষতি করা।
  10. ইন্টারনেট বেশি ব্যবহারের ফলে আসক্তি জন্মায়।
  11. অন্যের গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া।
  12. প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়া।
মনে রাখো
• বাস্তব জীবনে সামাজিক যোগাযোগ হ্রাস পায়- বিশ্বগ্রামের কারণে। [সি. বো. ২০১৬] 
• ইন্টারনেট বেশি ব্যবহারের ফলে আসক্তি জন্মায়।